যেভাবে প্রস্তুতি নিবেনঃ
বিসিএস লিখিত 'বাংলা' বিষয়ের প্রস্তুতি নিতে গেলে শুরুতেই আপনাকে বিগত পরীক্ষাসমূহের প্রশ্নসমূহ খুব ভালভাবে স্টাডি করতে হবে । প্রশ্নের ধরন ও গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে হালনাগাদ সিলেবাসের আলোকে নিজেই ১টি সাজেশন্স তৈরি করে নিন। BCS Bangla Preparation
একজন ভালো পরীক্ষার্থীর গতানুগতিক বাজারের সাজেশন্স-এ চলে না। তার একটি নিজের তৈরি করা সাজেশন্স থাকা আবশ্যক ।
নতুনদের জন্য বিসিএস প্রিলি প্রস্তুতি নির্দেশনা
এবার উক্ত সাজেশন্সের আলোকে টপিকভিত্তিক পড়াশুনা শুরু করে দিন।
সিলেবাসের কোন অংশটিতে জোর দিতে হবে সেটি বলতে গিয়ে ২৮ বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের জনাব মাশরুর হাসান বলেন- ‘ব্যাকরণ ও সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে'।
আর ডা. মোঃ আখতারুজ্জামান লিকু (৩২তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার) বলেন-
‘বাংলা ব্যাকরণ ও অনুবাদে ভালো করলে অনেক নম্বর নিশ্চিত করা যায় ।
BCS Preliminary Preparation & BCS Book List
সত্য হচ্ছে, বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্ত কৃতকার্যতা আসলে মার্কসে খেলা । আর লিখিত পরীক্ষায় যারা সব বিষয়ে গড়ে ৫% নম্বর বেশি পেয়ে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে তাদের ভাইভা শেষে কৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের থেকে ৯০ ভাগ বেশি থাকে ।
তাই সিলেবাসের যে অংশগুলোতে বেশি মার্কস তোলা যায়, সেগুলো আপনার প্রায়োরিটি লিস্টে আগে আসবে। সে টপিকগুলো আগে সনাক্ত করুন । BCS Bangla Preparation
কোন বই অনুসরণ করবেন এই প্রশ্নে সুশান্ত পাল (৩০ বিসিএস কাস্টমস ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী) বলেন-
“রেফারেন্স বই কম পড়ে গাইড বই বেশি পড়ুন। ৫টি রেফারেন্স বই পড়ার চেয়ে ১টি নতুন গাইড বই উল্টেপাল্টে দেখা ভালো” ।
রেফারেন্স বই বেশি পড়বেন নাকি গাইড বই বেশি পড়বেন এই বিষয়ে আমার মতামত হচ্ছে, এটা ৩টি প্রশ্নোত্তরের উপর নির্ভর করে:
১. আপনার যেমন-তেমন ১টা ক্যাডার পেলে চলবে কি?
২. লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি আপনি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর শুরু করেছেন কি?
৩. গত দু'বছরের মধ্যে বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় বা ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট পরীক্ষায় পাশ করেছেন কি?
উপর্যুক্ত ৩টি প্রশ্নের ১নং ও ৩নং প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়ে থাকে, তবে আপনাকে বিগত পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নব্যাংক সলভ করা ও গাইড বই অনুসরণ করলেই চলবে ।
কিন্তু উপর্যুক্ত ৩টি প্রশ্নের অন্তত ২টির উত্তর যদি 'না' হয়, তবে আপনাকে অন্তত ১টি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই পড়তেই হবে । যদি ব্যকরণের জন্য ১টি রেফারেন্স বই পড়তে চান তবে হায়াত মামুদের “ভাষা শিক্ষা” বইটি পড়তে পারেন। সাহিত্যের জন্য সৌমিত্র শেখরের “সাহিত্য জিজ্ঞাসা” বইটি পড়বেন । গাইড বই পড়ার আগে তথ্যের ব্যাপারে ন্যূনতম
কনফিউশন থাকলে অবশ্যই রেফারেন্স বইয়ের সাথে মিলিয়ে নেবেন ।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য বইয়ের তালিকা
বাংলা বানান শেখার জন্য ফারহানা জাহান উপমা (৩১ বিসিএস পরীক্ষায় সম্মিলিত ১ম স্থান অধিকারী) বাংলা একাডেমি প্রণীত ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের একেবারে শেষে 'প্রমিত বাংলা বানান' নামের অধ্যায়টি পড়তে পরামর্শ দিয়েছেন । সারাংশ, সারমর্ম, ভাবসম্প্রসারণের জন্য ফারহানা জাহান উপমা মুখস্ত না করে এগুলোর নিয়ম আয়ত্ত করতে ও বলেছেন ।
আমার পরামর্শ হচ্ছে- নিয়মের পাশাপাশি অন্তত: ১০টি উদাহরণ সারাংশ, সারমর্ম, ভাব-সম্প্রসারণ নিজের মতো করে খাতায় লিখুন । মান বা নিয়মের বিচ্যুতি মূল্যায়ন করুন । সারাংশ/সারমর্ম/ভাব-সম্প্রসারণ/ পত্রলিখন/রচনার জন্য হায়াত মামুদের 'ভাষা শিক্ষা' বইটি আমার কাজে দিয়েছিল । আপনিও দেখতে পারেন ।
সাধারণ ক্যাডারের জন্য বাংলা ২য় পত্রে বঙ্গানুবাদ ও গ্রন্থ সমালোচনা বেশি মার্কস প্রাপ্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি ।
বঙ্গানুবাদে ভালো করতে চাইলে একটা কথা মনে রাখতে হবে- ‘অনুবাদক একজন বিশ্বাসঘাতক'। শব্দের অনুবাদ যত সহজ, সংস্কৃতির অনুবাদ ততটা সহজ নয় । যেমন-ধরুন ‘অভিমান' শব্দটির ভালো কোন ইংরেজি প্রতিশব্দ নেই।
তাহলে এই ব্যাপারটিকে কিভাবে অনুবাদ করবেন? আবার, ধরুন, কাউকে ‘মীরজাফর' বলে দোষারোপ করা হলো। এই ‘মীরজাফর' শব্দটিকে ইংরেজিতে "Traitor" অনুবাদ করলে সঠিক ব্যঞ্জনা প্রকাশ পাবে না । তাই ভাষার অনুবাদে করতে হবে সংস্কৃতির অনুবাদ । বাংলার
ইতিহাসে মীরজাফর যেমন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে বেঈমানি করেছিল, তেমনি Judas যিশু খ্রিস্টের সাথে প্রতারণা করেছিল ।
তাই, বাংলায় যদি কাউকে বলেন- 'তুই একটা মীরজাফর' তবে- এই বাক্যটির ইংরেজি অনুবাদ "You traitor! অথবা, You are a traitor" বললে সঠিক ভাব অনুবাদ হয় না। বলতে হবে-You Judas! (তুই একটা মীরজাফর!)। সাধারণ আক্ষরিক অনুবাদ ও স্মার্ট ভাবানুবাদের পার্থক্য বুঝতে নিম্নের দুটি অনুবাদ সহায়তা করতে পারে । কবি John Donne - এর ১টি কবিতাংশ দুজন ব্যক্তি দুভাবে অনুবাদ করেছেন:Donne এর কবিতাংশ
'For God's sake hold your tongue, and let me love' BCS Bangla Preparation
অনুবাদ-১
সাধারণ আক্ষরিক অনুবাদ (নিম্নমানের) “আল্লাহর দোহাই তোমাদের মুখ সামলাও এবং আমাকে ভালোবাসতে দাও” একই কবিতাংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শেষের কবিতায় অনুবাদ করেছেন এইভাবে-
অনুবাদ-২ (মান সম্পন্ন অনুবাদ)
‘দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর,
ভালোবাসিবারে দে মোরে অবসর' এখানে রবীন্দ্রনাথের অনুবাদটি শ্রেয়তর। কারণ এটি ভাবানুবাদ ।
আপনাকে তাই অনুচ্ছেদের ভাবানুবাদ করতে হবে, আক্ষরিক অনুবাদ নয়। অনুবাদে দক্ষতা অর্জন করতে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো পত্রিকার এডিটোরিয়াল থেকে প্রতিদিন অন্তত ১টি করে অনুচ্ছেদ অনুবাদ করতে হবে ।
এই অভ্যাসটি দীর্ঘ দিনের হলে অর্থাৎ প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে থেকে হলে খুব ভালো হয় ।
গ্রন্থ সমালোচনা
গ্রন্থ সমালোচনা করতে চাইলে তার নিয়মটা আগে শিখতে হবে। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসভিত্তিক ৩টি বই, ২টি বিখ্যাত প্রবন্ধের বই, ৪টি বিখ্যাত উপন্যাস (সমকালীন ২টি + প্রাচীন ২টি) এর সমালোচনা আগে থেকেই করে ফেলুন ।
কাল্পনিক সংলাপ
আপনারা নিশ্চয়ই মাধ্যমিকে বা উচ্চ মাধ্যমিকে Dialogue বা সংলাপ পড়েছেন । এটা এমন কঠিন কোন টপিক নয় । শুধু উত্তরের লেংথ প্রশ্নের নম্বর অনুসারে বাড়াতে হবে । মানসম্মত কাল্পনিক সংলাপ লিখতে নিম্নের কাজগুলো করুন:
ক) কিছু সিলেক্টেড সম্ভাষণ লাইন খাতায় লিখুন ।
খ) প্রশ্নোত্তরের কিছু স্মার্ট কার্টেসি প্রকাশক বাক্য খাতায় লিখুন ।
গ) সাম্প্রতিক সময়ের (যেমন-অর্থনীতি, রাজনীতি, সুশাসন, নির্বাচন, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক মাধ্যমের সুফল/ কুফল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস, দ্বিপাক্ষিক চুক্তির প্রভাব) ইত্যাদি টপিকের কিছু লাইন, শব্দ এবং ডাটা খাতায় লিখে ফেলুন । দৈনন্দিন সতর্ক পত্রিকাপাঠ আপনাকে টার্মগুলো বুঝতে সহায়তা করবে ।
যেমন-ধরুন, অর্থনৈতিক ব্যাপারে কথা বলতে গেলে ‘জিডিপি’, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি ও রপ্তানি সংক্রান্ত ডাটা ও টার্মগুলো মনে রাখতে হবে । এগুলো মনে রাখলে আপনার উপস্থাপনা সুন্দর ও তথ্যবহুল হবে ।
পত্র লিখন
বিগত পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্র দেখে কয়েক ধরনের পত্রলেখার নিয়ম শিখুন । মনে রাখবেন, শুধু বন্ধুর/পিতা-মাতার কাছে চিঠিই পত্র লিখনের অন্তর্ভুক্ত নয় । অফিসিয়াল চিঠি/মানপত্র/চাকুরির দরখাস্ত/ ব্যবসায়িক পত্র এগুলোও পত্রলিখনের অন্তর্ভুক্ত । নিয়ম আত্মস্থ করে কয়েকটি মডেল পত্র নিজে থেকে লিখুন । মান যাচাই করুন । পত্র/দরখাস্ত লেখার হালনাগাদ কাঠামো ও তারিখ লেখার স্টাইলটা ফলো করবেন ।
রচনা
রচনা যত লম্বা হয়, তত ভালো হয়! এই প্রাচীন কথাটি মনে রাখবেন । কাটাকাটি এভয়েড করতে হবে । কাটতে হলে একটানে কাটুন। প্রয়োজনীয় উদ্ধৃতি,ডাটা, গ্রাফ, চার্ট না থাকলে রচনা মানসম্মত হবে না ।
তাই রচনা মুখস্থ না করে শুধুমাত্র টপিকভিত্তিক প্যারা শিরোনাম ও ডাটা/চার্ট মনে রাখুন রচনার প্রথম ও শেষ প্যারা যাতে মানসম্মত হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন ।
কারণ, ব্যস্ত পরীক্ষকের পক্ষে যে পুরো রচনা পড়ে দেখার এত সময় নেই ।
ডাটা ও উদ্ধৃত্তি সবুজ কালিতে হাইলাইটেড করুন। ভালো নম্বর পাবেন নিশ্চিত ।
Comments
Post a Comment